Sunday 13 June 2021

টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ

মেরিন ড্রাইভ সড়ক:

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক, যা বঙ্গোপসাগর এর পাশ দিয়ে কক্সবাজারের কলাতলী সৈকত থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি বর্তমানে পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ সড়ক।
 ২০১৭ সালের ৬ মে এটি বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন

পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত জুড়ে থাকা এই রাস্তাটিই এখন পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ।এই সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয় ১৯৮৯ সালে। ১৯৯৩ সালে তৎকালীন সরকার ৪৮ কিঃমিঃ দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ প্রকল্প গ্রহণ করেন।বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে এটির নির্মাণ কাজ পরিচালনা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ।কক্সবাজার জেলার আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে মেরিন ড্রাইভ রোড অন্যতম। কক্সবাজারের কলাতলী বীচ থেকে এই সড়ক চলে গেছে টেকনাফ পর্যন্ত। বিস্তৃতি ৮০ কিলোমিটার। কক্সবাজারের এই রাস্তাটি পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ রোড।

 এই রোডের এক পাশে সমুদ্র সৈকত আর অন্যপাশে পাহাড় বেয়ে ঝর্ণার ধারা বইছে। বিশাল বিস্তৃত সৈকত, ইনানী পাথুরে সৈকত ও জেলেদের সাগরে মাছ ধরা উপভোগ করা যায় মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে যেতে যেতে। কক্সবাজার থেকে খোলা জিপ, মাইক্রোবাস বা অটোরিকশায় মেরিন ড্রাইভ রোড হয়ে যাওয়া যাবে হিমছড়ি ও ইনানী। আর যেতে যেতেই দেখা যাবে পাহাড়, সাগর আর ঝর্ণার চোখ জুড়ানো দৃশ্য। এছাড়া যেতে যেতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বসে পড়া যাবে কোন রেস্টুরেন্টে। মেরিন ড্রাইভ রোডের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে দারুণ সব রেস্টুরেন্ট। সব মিলেয়ে দারুণ উপভোগ্য। 
এখানে দেখা যায়, একপাশে পাহাড় আর অন্যপাশে সমুদ্রের বিশাল জলরাশির খেলা। খোলা আকাশ ও সমুদ্রের ঢেউয়ে মন হারানো নাবিকের কাছে মেরিন ড্রাইভ রোড এক অন্যতম আকর্ষণ। পথ ধরে হাঁটলে কিংবা জিপে চড়লে মনে হবে চিরায়িত সেই গান ‘এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলো তো”।
এক অন্যরকম সবুজ পাহাড়, নীল জলের খেলায় মেতে উঠবে এখানে বেড়াতে আসা পর্যটক। বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য এই পথটি উপযুক্ত স্থান। সড়কের পাশে প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে আছে সুপারি, নারকেল গাছ ও ঝাউবিথী গাছের সারি। এছাড়াও এখানে রয়েছে অনেক লতা-গুল্ম ও ফল ফলাদির গাছ।
৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রোডটি নির্মাণে সময় লেগেছে ২৪ বছর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নির্মাণ প্রকৌশল ব্যাটালিয়ন কতৃক ১৯৯৩ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ব্যয় হয়েছে ৪৫৬ কোটি টাকা।

পূর্বে পাহাড় আর পশ্চিমে সমুদ্র, মাঝখানে চিরহরিৎ বন। টেকনাফ গর্জন ফরেস্ট নামে খ্যাত চির সবুজ এই বন পর্যটকদের খুবই আকর্ষণ করে। কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে জাহাজপুরা নামক জায়গায় অবস্থিত এই বনে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে কক্সবাজার থেকে ইনানী ও মনখালি পার হয়ে যেতে হয়। যাবার পথে অনন্যসুন্দর নৈসর্গিক দৃশ্য চোখে পড়ে। 


বিশেষ দ্রষ্টব্য:

মেরিন ড্রাইভ রোড ভ্রমণে যা জানা অবশ্য প্রয়োজন
মেরিন ড্রাইভের রাস্তা পুরোটা ঘুরে আসতে সময় লাগবে প্রায় ৫ ঘণ্টা। কমবেশী হতে পারে যা গাড়ির উপর নির্ভর করে।
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোড রাস্তা প্রায় ৮০ কিলোমিটার। জিপে চড়ে এই রোডের নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখতে চাইলে আগে থেকে ড্রাইভারকে বলে রাখুন নয়তো কলাতলী কিংবা ইনানী ও আশেপাশের জায়গা ঘুরিয়ে আপনাকে ফিরিয়ে আনবে।
সিজনের উপর নির্ভর করে গাড়ি ভাড়া। অফ সিজনে ৪ হাজার টাকায় পেয়ে পাবেন রিজার্ভ গাড়ি। টুরিস্ট সিজনে এই ভাড়া আরেকটু বাড়তে পারে। সুগন্ধা পয়েন্টে পাবেন গাড়ির খোঁজ।
চাইলে সিএনজি অটো নিয়েও ঘুরে আসতে পারেন মেরিন ড্রাইভ রোড। তবে এতে সময় আরেকটু বেশি লাগবে। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসাই ভালো।
পথে ইনানি বিচের সামনে বেশ কিছু ভালো খাবারের দোকান রয়েছে। দুপুরের খাবারটা সেরে নিতে পারেন এখান থেকেই।পথে কয়েকটি সেনাবাহিনী চেকপোস্ট পড়বে। সেখানে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে ভুলবেন না।
অটোরিকশা, সিএনজি দিয়ে পুরো রোড ঘুরতে সময় লাগবে আরো বেশি।
অন সিজনে গাড়ি ভাড়া, জিপ ভাড়া বেশি কিন্তু অফ সিজনে ভাড়া কম।
সেনাবাহিনী চেকপোস্ট রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে কার্পণ্য করবেন না। ভ্রমণে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি রাখুন সাথে।
খাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেখানে। ক্ষুধা লাগলে খাবার সেরে নিতে পারেন।
দিনের মধ্যে এই সড়ক ঘুরে ফেলা উত্তম।

Thursday 10 June 2021

ফেসবুক মোটিভেশন স্ট্যাটাস

বাস্তবতার পরিসরে কেউ কারও নই !
 শূন্য পকেটে আর খালি পেটে ঘর থেকে বেরোলেই  বুঝা যায়, বাস্তবতা কতটা কঠিন । সকলে  সুখে-শান্তিতে আদর ও ভালোবাসা দেখায়  আর দুঃখ-কষ্টের প্রয়াসে কথা বলে না এমনকি চিনেও চিনবে না। এটাই বাস্তব!
-মোহাম্মদ আলম

ফেসবুক মোটিভেশন স্ট্যাটাস

জীবন চলার পথে প্রতিকূলতা অনেক আসবেই। 
ভূমিষ্ঠ হওয়ার  পর একটি নবজাতক হঠাৎ করে উঠে দাঁড়ায় না ,  হাঁটতে অনেক দিন সময় লাগে  তেমনি একজন  মানুষের সাফল্য অর্জন লক্ষ্যে  তাকে  নবজাতকের মত উঁচু করে দাঁড়াতে অনেকবার হোঁচট খেতে হয় ।জীবন যুদ্ধে হার মানতেই নেই।  তাই জীবন কখনও হতাশ বা ভেঙে পড়বার নই।আপনার আত্মবিশ্বাস ও বুকে অদম্য সাহস নিয়ে  বার- বার চেষ্টা চালিয়ে যান। 
 ইনশাআল্লাহ্ একদিন সফলতা আসবেই!
-মোহাম্মদ আলম 

ঈদ আনন্দে মেরিন ড্রাইভ

সাগর পাড়ের মাছ ধরার দৃশ্য

বাঙালির ঐতিহ্যের শহীদ মিনার

Teknaf Blog BD
ঐতিহ্যের শহীদ মিনারের ইতিকথা:



বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হামিদুর রহমান মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত শহীদ মিনারের স্থপতি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন।






বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জোড়ালো দাবি অনেক পুরোনো। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠির রক্তস্নাত রোসানলে পড়ে নিরস্ত্র স্বাধীনচেতা বাঙ্গালীরা। ভাষার জন্য জীবন দিয়ে বাঙ্গালীরাই দেখিয়ে দেয় দাবি আদায়ের পথপরিক্রমা। এরপর নানা পর্যায় পেড়িয়ে ৭১’। একাত্তরের যুদ্ধেই আসে চূড়ান্ত বিজয়। তবে ভাষা আন্দোলনের প্রতীক হয়ে রয়েছে শহীদ মিনার। ভাষা শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়া হয় স্মৃতিস্তম্ভ, এটাই পরে শহীদ মিনার হিসেবে পরিচিতি পায়। এই শহীদ মিনার তৈরির পেছনেও রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। ইতিহাসের পাতা উল্টালে জানা যায়, দেশভাগের পর থেকেই ভাষার দাবিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষের ভাষা ছিল বাংলা। কিন্তু বাংলা ভাষাভাষীদের উপর উর্দু ভাষাকে চাপিয়ে দেয়ার গুঞ্জনেই প্রতিবাদী হয়ে উঠে বাঙ্গালীরা। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর ভাষার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হলেও ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে আন্দোলনে রূপ নেয়, যা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি চরম প্রকাশ ঘটে। ওইদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালামসহ বেশ কয়েকজন ছাত্র-যুবক হতাহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হয়। নানা নির্যাতন সত্ত্বেও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় রাজপথে নেমে আসে। তারা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাযায় অংশ নেয়। ভাষাশহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতের মধ্যেই মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে তোলা হয় একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি গুড়িয়ে দেয়। প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ হয়েছিল তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে অতিদ্রুত অপরিকল্পিতভাবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু করে রাত্রির মধ্যে তা সম্পন্ন করে। শহীদ মিনারের খবর কাগজে পাঠানো হয় ওই দিনই। ‘শহীদ বীরের স্মৃতিতে’- এই শিরোনামে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ছাপা হয় শহীদ মিনারের খবর। মিনারটি তৈরি হয় মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেলের (ব্যারাক) ১২ নম্বর শেডের পূর্ব প্রান্তে। হোস্টেলের মধ্যবর্তী রাস্তার গা-ঘেঁষে। উদ্দেশ্য বাইরের রাস্তা থেকে যেন সহজেই চোখে পড়ে এবং যে কোনো শেড থেক বেরিয়ে এসে ভেতরের লম্বা টানা রাস্তাতে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে। শহীদ মিনারটি ছিল ১০ ফুট উচ্চ ও ৬ ফুট চওড়া। মিনার তৈরির তদারকিতে ছিলেন জিএস শরফুদ্দিন (ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন নামে পরিচিত), ডিজাইন করেছিলেন বদরুল আলম। সঙ্গে ছিলেন সাঈদ হায়দার। তাদের সহযোগিতা করেন দুইজন রাজমিস্ত্রী। মেডিকেল কলেজের সম্প্রসারণের জন্য জমিয়ে রাখা ইট, বালি এবং পুরান ঢাকার পিয়ারু সর্দারের গুদাম থেকে সিমেন্ট আনা হয়। ভোর হবার পর একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় মিনারটি। ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে অনানুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন ২২ ফেব্রুয়ারির শহীদ শফিউরের পিতা। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে ১০টার দিকে শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন। উদ্বোধনের দিন পুলিশ ও সেনাবাহিনী মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেল ঘিরে ফেলে এবং প্রথম শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলে। এরপর ঢাকা কলেজেও একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয়, এটিও সরকারের নির্দেশে পরে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল। অবশেষে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেবার পরে ১৯৫৭ সালের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ শুরু হয়। এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির তত্ত্বাবধানে। ১৯৫৬ সালে আবু হোসেন সরকারের মুখ্যমন্ত্রীত্বের আমলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বর্তমান স্থান নির্বাচন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। তৎকালীন পূর্ত সচিব (মন্ত্রী) আবদুস সালাম খান মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে `শহীদ মিনারের` ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য চূড়ান্তভাবে একটি স্থান নির্বাচন করেন। ১৯৫৬ সালের ২১ শে ফ্রেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ রিকশাচালক আওয়ালের ৬ বছরের মেয়ে বসিরনকে দিয়ে এ স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের উদ্যোগে আওয়ামী লীগ নের্তৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট সরকার ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করে। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হামিদুর রহমান মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত শহীদ মিনারের স্থপতি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন। ১৯৫৭ সালে নভেম্বর মাসে নিজের রূপকল্পনা ও নভেরা আহমেদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সংশোধিত আকারে শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ নকশায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের সম্মুখভাগের বিস্তৃত এলাকা এর অন্তর্ভূক্ত ছিল। ১৯৬৩ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ ব্যক্তিত্ব আবুল বরকতের মাতা হাসিনা বেগম কর্তৃক নতুন শহীদ মিনারের উদ্বোধন করা হয়। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। আর শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণে রাখতে প্রতীক হয়ে রয়েছে শহীদ মিনার।

টেকনাফ মাথিনের কূপ

Teknaf Blog BD
মাথিনের কূপ বাংলাদেশের টেকনাফ শহরে অবস্থিত টেকনাফ পৌরসভার নিকটস্থ থানা চত্ত্বরে এর অবস্থান। আঠারো শতকের শেষদিকে টেকনাফে সুপেয় পানির খুবই অভাব ছিল। থানা প্রাঙ্গনে একটিমাত্র মিষ্ট পানির কূপ ছিল যা সমগ্র টেকনাফের একমাত্র। প্রতিদিনই রাখাইন তরুণীরা পাতকূয়ায় জল নিতে আসতেন। ধীরাজ ভট্টাচার্য কলকাতা থেকে এখানে বদলী হয়ে আসেন। অন্যান্য রাখাইন তরুণীর সাথে রাখাইন জমিদার কন্যা মাথিন জল নিতে আসতেন। এভাবে ধীরাজের সাথে মাথিনের প্রেমের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। দুজনে বিয়ে করারও সিন্ধান্ত নেন। কিন্তু হঠাৎ করে কলকাতা থেকে আসা চিঠিতে ধীরাজকে জানানো হয় যে বাবা গুরুতর অসুস্থ আছেন। ফলে, কলকাতায় ফিরে যাবার প্রস্তুতি নেন ধীরাজ। কিন্তু মাথিন এতে রাজি ছিলেন না। তাঁর ধারণা ছিল যে, পরদেশী বাবু চলে গেলে আর ফিরে আসবেন না। তাই মাথিনকে না জানিয়ে ধীরাজ কলকাতা চলে যান। মাথিন বেশ কষ্ট পান ও নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেন। কোনভাবেই তাঁকে বোঝানো যায়নি। একসময় মাথিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরবর্তীকালে তাঁদের অমর প্রেমের আত্মত্যাগের নিদর্শন হিসেবে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন জায়গাটি সংরক্ষণ করে একটিকে মাথিনের কূপ হিসেবে নামকরণ করেন। ২০০৬ সালে ধীরাজ-মাথিনের মর্মান্তিক প্রেম কাহিনীর প্রায় ৮০ বছর পর টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালেদ হোসেন, সাংবাদিক আব্দুল কুদ্দুস রানাকে সাথে নিয়ে এ কূপটির সংস্কার কার্যক্রম সমাপণ করেন। এরপর থেকে এটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে সর্বত্র পরিচিতি পায়। জায়গাটি স্থানীয়ভাবে ‘মাথিনের কূপ’ নামেই পরিচিত। কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ থানার কম্পাউন্ডে অবস্থিত এই স্থানটি। শত বছর আগে এলাকার একমাত্র বিশুদ্ধ পানির কূপ হিসেবে পরিচিত ছিল এটি। নিত্য ভোরে কলসি নিয়ে সখিদের সঙ্গে এখানেই পানি নিতে আসতেন এক কিন্নরকণ্ঠী তরুণী। দেখতেও বেশ, আবার চেহারায় বাঙালিয়ানার ভাব। আর শীতের কুয়াশা মাখা সকালে কোনও একজোড়া প্রেমিক চোখে যদি ধরা পড়ে সেই চাহনি! সব মিলিয়ে একটি প্রণয়োপাখ্যান সৃষ্টি হওয়ার জন্য যে পরিবেশ ও অনুসঙ্গ প্রয়োজন ছিল, সবকিছুর সমারোহ ঘটছিল যেনো। এরপর যা হওয়ার তাই হলো। তৎকালীন রাখাইন জমিদারের আদরের রাজকন্যা মাথিনের সঙ্গে প্রণয় জমে উঠলো বাঙালি পুলিশ অফিসার ধীরাজের। শিশরি ভেজা সকালে বেলি ফুল দেখার জন্য কম্পাউন্ডে বসা ধীরাজের সঙ্গে চোখাচোখি শুরু হলো পানি নিতে আসা মাথিনের। চাকরির প্রয়োজনে টেকনাফে আসা একজন পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় প্রকৃতিকন্যার প্রেম জমে উঠলো ক্রমেই। তবে অবশেষে বিরহেই হলো এর পরিণতি। যুগ যুগ ধরে সেই প্রেমগাথা নিয়ে রচিত হতে শুরু করলো অজস্র গীতিনাট্য, কাব্য, উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যে এক অনুপম প্রেমিকা হিসেবে স্থান করে নিলেন ‘মাথিন’। তাই প্রায় শতবছর পরে এসেও মানুষের আগ্রহের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ‘মাথিনের কূপ’ নামে পরিচিত সেই থানা কম্পাউন্ডের কূপটি। স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, ধীরাজ ভট্টাচার্য ১৯০৫ সালে ৫ নভেম্বর ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় ইস্ট বেঙ্গলের যশোর জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯২৩-১৯২৪ সালের দিকে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে কক্সবাজারের টেকনাফে কর্মরত ছিলেন তিনি। সেসময় থানার কূপ থেকে জল নিতে আসা স্থানীয় রাখাইন জমিদার কন্যা মাথিনের সঙ্গে তার হৃদয় বিনিময় হয়। এরপর হঠাৎ একদিন বাবার অসুস্থতার কথা জানতে পেরে ছুটি নিয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে কাউকে কিছু না বলে, মতান্তরে একমাসের কথা বলে কলকতায় ফিরে যান তিনি। পরে আর চাকরিতে যোগ দেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা। তাই মাথিনের কাছেও আরও ফিরে আসা হয়নি। এদিকে মাথিনও তাকে ছাড়া জল-খাবার মুখে তুলবেন না বলে পণ করেন। এক পর্যায়ে অনাহারে বিরহ যাপন করতে করতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রেমের কারণে শীর্ণ-জীর্ণ হয়ে পৃথিবী ত্যাগ করলেন বর্ণাঢ্য জমিদার কন্যা। পরবর্তীতে ১৯৩০ সালে লাহোরের ইউনিক পাবলিকেশন্স থেকে আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘যখন পুলিশ ছিলাম’ প্রকাশ করেন ধীরাজ ভট্টাচার্য। এই বইয়ে তিনি নিজেও লিখেছেন মাথিন প্রসঙ্গে। এই গ্রন্থে মূলতঃ ধীরাজ-মাথিনের ঐতিহাসিক প্রেমের কাহিনী ফুটে উঠেছে। সেই থেকে ধীরে ধীরে এই টেকনাফের কূপটি মানুষের নজরে আসতে শুরু করে। টেকনাফ মাথিন কূপের উৎস সন্ধানকারী আবদুল কুদ্দুস রানা বলছেন, ‘ঘটনাটি সত্য প্রেমের বেদনার্ত অধ্যায়। এই অধ্যায় তুলে ধরতে ১৯৮৪ সালে একটি সাইন বোর্ড টাঙিয়ে মাথিনের কূপটি ধরে রাখার চেষ্টা করেছি।’ কূপটি সংরক্ষণের ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, ‘আমি তখন স্কুল ছাত্র। কলকাতা থেকে কিছু সাংবাদিক টেকনাফে আসছিল। তখন তারা সঙ্গে করে কিছু বই নিয়ে আসছিল। ওই বইটির নাম ছিল ‘‘যখন পুলিশ ছিলাম’’। এই বইয়ের কোনও কভার ছিল না। বইটির ভেতরে তিন-চার পৃষ্ঠায় ধীরাজের লেখা একটি চিঠি ছিল। ঐতিহাসিক মাথিনের কূপের এই কাহিনীটি জানার পরে আমি তখন বাঁশের বেড়া দিয়ে মোড়ানো কূপটিতে ১৭৫ টাকা খরচ করে একটি টিনের সাইন বোর্ড লাগিয়ে দিয়েছিলাম। সেই লাগানো থেকে আজকের মাথিনের কূপ সংরক্ষিত হয়ে উঠেছে। এখন প্রতি বছর ৬ থেকে ৭ লাখ পর্যটক মাথিনের কূপ দেখতে আসেন। টেকনাফ মানে মাথিনের কূপ, মাথিনের কূপ মানে টেকনাফ।’ ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিমান কিংবা বাসে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে এসি বাসের জন্য যোগাযোগ: গ্রীন লাইন (ফোন: ৯৩৩৯৬২৩, ৯৩৪২৫৮০); সোহাগ পরিবহন (৯৩৩১৬০০, ৭১০০৪২২); সিল্ক লাইন (৭১০২৪৬১, ৮১০৩৮২)। ভাড়া ৮৫০ থেকে ১২০০ টাকা। নন-এসি বাসের জন্য যোগাযোগ: এস. আলম (৯৩৩১৮৬৪, ৮৩১৫০৮৭)। টেকনাফ শহরে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মোটলে ভাড়া ৫০০ থেকে ১২৫০ টাকা। এছাড়াও টেকনাফ শহরে সাধারণ মানে হোটেলে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে থাকা যায়।

টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ

মেরিন ড্রাইভ সড়ক: কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক, যা বঙ্গোপসাগর এর পাশ দিয়ে কক্সবাজারের কলাতলী সৈকত থেকে টেকনাফ...