মেরিন ড্রাইভ সড়ক:
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক, যা বঙ্গোপসাগর এর পাশ দিয়ে কক্সবাজারের কলাতলী সৈকত থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি বর্তমানে পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ সড়ক।
২০১৭ সালের ৬ মে এটি বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত জুড়ে থাকা এই রাস্তাটিই এখন পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ।এই সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয় ১৯৮৯ সালে। ১৯৯৩ সালে তৎকালীন সরকার ৪৮ কিঃমিঃ দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ প্রকল্প গ্রহণ করেন।বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে এটির নির্মাণ কাজ পরিচালনা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ।কক্সবাজার জেলার আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে মেরিন ড্রাইভ রোড অন্যতম। কক্সবাজারের কলাতলী বীচ থেকে এই সড়ক চলে গেছে টেকনাফ পর্যন্ত। বিস্তৃতি ৮০ কিলোমিটার। কক্সবাজারের এই রাস্তাটি পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ রোড।
এই রোডের এক পাশে সমুদ্র সৈকত আর অন্যপাশে পাহাড় বেয়ে ঝর্ণার ধারা বইছে। বিশাল বিস্তৃত সৈকত, ইনানী পাথুরে সৈকত ও জেলেদের সাগরে মাছ ধরা উপভোগ করা যায় মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে যেতে যেতে। কক্সবাজার থেকে খোলা জিপ, মাইক্রোবাস বা অটোরিকশায় মেরিন ড্রাইভ রোড হয়ে যাওয়া যাবে হিমছড়ি ও ইনানী। আর যেতে যেতেই দেখা যাবে পাহাড়, সাগর আর ঝর্ণার চোখ জুড়ানো দৃশ্য। এছাড়া যেতে যেতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বসে পড়া যাবে কোন রেস্টুরেন্টে। মেরিন ড্রাইভ রোডের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে দারুণ সব রেস্টুরেন্ট। সব মিলেয়ে দারুণ উপভোগ্য।
এখানে দেখা যায়, একপাশে পাহাড় আর অন্যপাশে সমুদ্রের বিশাল জলরাশির খেলা। খোলা আকাশ ও সমুদ্রের ঢেউয়ে মন হারানো নাবিকের কাছে মেরিন ড্রাইভ রোড এক অন্যতম আকর্ষণ। পথ ধরে হাঁটলে কিংবা জিপে চড়লে মনে হবে চিরায়িত সেই গান ‘এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলো তো”।
এক অন্যরকম সবুজ পাহাড়, নীল জলের খেলায় মেতে উঠবে এখানে বেড়াতে আসা পর্যটক। বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য এই পথটি উপযুক্ত স্থান। সড়কের পাশে প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে আছে সুপারি, নারকেল গাছ ও ঝাউবিথী গাছের সারি। এছাড়াও এখানে রয়েছে অনেক লতা-গুল্ম ও ফল ফলাদির গাছ।
৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রোডটি নির্মাণে সময় লেগেছে ২৪ বছর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নির্মাণ প্রকৌশল ব্যাটালিয়ন কতৃক ১৯৯৩ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ব্যয় হয়েছে ৪৫৬ কোটি টাকা।
পূর্বে পাহাড় আর পশ্চিমে সমুদ্র, মাঝখানে চিরহরিৎ বন। টেকনাফ গর্জন ফরেস্ট নামে খ্যাত চির সবুজ এই বন পর্যটকদের খুবই আকর্ষণ করে। কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে জাহাজপুরা নামক জায়গায় অবস্থিত এই বনে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে কক্সবাজার থেকে ইনানী ও মনখালি পার হয়ে যেতে হয়। যাবার পথে অনন্যসুন্দর নৈসর্গিক দৃশ্য চোখে পড়ে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
মেরিন ড্রাইভ রোড ভ্রমণে যা জানা অবশ্য প্রয়োজন
মেরিন ড্রাইভের রাস্তা পুরোটা ঘুরে আসতে সময় লাগবে প্রায় ৫ ঘণ্টা। কমবেশী হতে পারে যা গাড়ির উপর নির্ভর করে।
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোড রাস্তা প্রায় ৮০ কিলোমিটার। জিপে চড়ে এই রোডের নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখতে চাইলে আগে থেকে ড্রাইভারকে বলে রাখুন নয়তো কলাতলী কিংবা ইনানী ও আশেপাশের জায়গা ঘুরিয়ে আপনাকে ফিরিয়ে আনবে।
সিজনের উপর নির্ভর করে গাড়ি ভাড়া। অফ সিজনে ৪ হাজার টাকায় পেয়ে পাবেন রিজার্ভ গাড়ি। টুরিস্ট সিজনে এই ভাড়া আরেকটু বাড়তে পারে। সুগন্ধা পয়েন্টে পাবেন গাড়ির খোঁজ।
চাইলে সিএনজি অটো নিয়েও ঘুরে আসতে পারেন মেরিন ড্রাইভ রোড। তবে এতে সময় আরেকটু বেশি লাগবে। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসাই ভালো।
পথে ইনানি বিচের সামনে বেশ কিছু ভালো খাবারের দোকান রয়েছে। দুপুরের খাবারটা সেরে নিতে পারেন এখান থেকেই।পথে কয়েকটি সেনাবাহিনী চেকপোস্ট পড়বে। সেখানে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে ভুলবেন না।
অটোরিকশা, সিএনজি দিয়ে পুরো রোড ঘুরতে সময় লাগবে আরো বেশি।
অন সিজনে গাড়ি ভাড়া, জিপ ভাড়া বেশি কিন্তু অফ সিজনে ভাড়া কম।
সেনাবাহিনী চেকপোস্ট রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে কার্পণ্য করবেন না। ভ্রমণে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি রাখুন সাথে।
খাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেখানে। ক্ষুধা লাগলে খাবার সেরে নিতে পারেন।
No comments:
Post a Comment