Thursday, 10 June 2021
বাঙালির ঐতিহ্যের শহীদ মিনার
টেকনাফ মাথিনের কূপ
মাথিনের কূপ বাংলাদেশের টেকনাফ শহরে অবস্থিত টেকনাফ পৌরসভার নিকটস্থ থানা চত্ত্বরে এর অবস্থান। আঠারো শতকের শেষদিকে টেকনাফে সুপেয় পানির খুবই অভাব ছিল। থানা প্রাঙ্গনে একটিমাত্র মিষ্ট পানির কূপ ছিল যা সমগ্র টেকনাফের একমাত্র। প্রতিদিনই রাখাইন তরুণীরা পাতকূয়ায় জল নিতে আসতেন। ধীরাজ ভট্টাচার্য কলকাতা থেকে এখানে বদলী হয়ে আসেন। অন্যান্য রাখাইন তরুণীর সাথে রাখাইন জমিদার কন্যা মাথিন জল নিতে আসতেন। এভাবে ধীরাজের সাথে মাথিনের প্রেমের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। দুজনে বিয়ে করারও সিন্ধান্ত নেন। কিন্তু হঠাৎ করে কলকাতা থেকে আসা চিঠিতে ধীরাজকে জানানো হয় যে বাবা গুরুতর অসুস্থ আছেন। ফলে, কলকাতায় ফিরে যাবার প্রস্তুতি নেন ধীরাজ। কিন্তু মাথিন এতে রাজি ছিলেন না। তাঁর ধারণা ছিল যে, পরদেশী বাবু চলে গেলে আর ফিরে আসবেন না। তাই মাথিনকে না জানিয়ে ধীরাজ কলকাতা চলে যান। মাথিন বেশ কষ্ট পান ও নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেন। কোনভাবেই তাঁকে বোঝানো যায়নি। একসময় মাথিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরবর্তীকালে তাঁদের অমর প্রেমের আত্মত্যাগের নিদর্শন হিসেবে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন জায়গাটি সংরক্ষণ করে একটিকে মাথিনের কূপ হিসেবে নামকরণ করেন। ২০০৬ সালে ধীরাজ-মাথিনের মর্মান্তিক প্রেম কাহিনীর প্রায় ৮০ বছর পর টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালেদ হোসেন, সাংবাদিক আব্দুল কুদ্দুস রানাকে সাথে নিয়ে এ কূপটির সংস্কার কার্যক্রম সমাপণ করেন। এরপর থেকে এটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে সর্বত্র পরিচিতি পায়। জায়গাটি স্থানীয়ভাবে ‘মাথিনের কূপ’ নামেই পরিচিত। কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ থানার কম্পাউন্ডে অবস্থিত এই স্থানটি। শত বছর আগে এলাকার একমাত্র বিশুদ্ধ পানির কূপ হিসেবে পরিচিত ছিল এটি। নিত্য ভোরে কলসি নিয়ে সখিদের সঙ্গে এখানেই পানি নিতে আসতেন এক কিন্নরকণ্ঠী তরুণী। দেখতেও বেশ, আবার চেহারায় বাঙালিয়ানার ভাব। আর শীতের কুয়াশা মাখা সকালে কোনও একজোড়া প্রেমিক চোখে যদি ধরা পড়ে সেই চাহনি! সব মিলিয়ে একটি প্রণয়োপাখ্যান সৃষ্টি হওয়ার জন্য যে পরিবেশ ও অনুসঙ্গ প্রয়োজন ছিল, সবকিছুর সমারোহ ঘটছিল যেনো। এরপর যা হওয়ার তাই হলো। তৎকালীন রাখাইন জমিদারের আদরের রাজকন্যা মাথিনের সঙ্গে প্রণয় জমে উঠলো বাঙালি পুলিশ অফিসার ধীরাজের। শিশরি ভেজা সকালে বেলি ফুল দেখার জন্য কম্পাউন্ডে বসা ধীরাজের সঙ্গে চোখাচোখি শুরু হলো পানি নিতে আসা মাথিনের। চাকরির প্রয়োজনে টেকনাফে আসা একজন পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় প্রকৃতিকন্যার প্রেম জমে উঠলো ক্রমেই। তবে অবশেষে বিরহেই হলো এর পরিণতি। যুগ যুগ ধরে সেই প্রেমগাথা নিয়ে রচিত হতে শুরু করলো অজস্র গীতিনাট্য, কাব্য, উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যে এক অনুপম প্রেমিকা হিসেবে স্থান করে নিলেন ‘মাথিন’। তাই প্রায় শতবছর পরে এসেও মানুষের আগ্রহের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ‘মাথিনের কূপ’ নামে পরিচিত সেই থানা কম্পাউন্ডের কূপটি। স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, ধীরাজ ভট্টাচার্য ১৯০৫ সালে ৫ নভেম্বর ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় ইস্ট বেঙ্গলের যশোর জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯২৩-১৯২৪ সালের দিকে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে কক্সবাজারের টেকনাফে কর্মরত ছিলেন তিনি। সেসময় থানার কূপ থেকে জল নিতে আসা স্থানীয় রাখাইন জমিদার কন্যা মাথিনের সঙ্গে তার হৃদয় বিনিময় হয়। এরপর হঠাৎ একদিন বাবার অসুস্থতার কথা জানতে পেরে ছুটি নিয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে কাউকে কিছু না বলে, মতান্তরে একমাসের কথা বলে কলকতায় ফিরে যান তিনি। পরে আর চাকরিতে যোগ দেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা। তাই মাথিনের কাছেও আরও ফিরে আসা হয়নি। এদিকে মাথিনও তাকে ছাড়া জল-খাবার মুখে তুলবেন না বলে পণ করেন। এক পর্যায়ে অনাহারে বিরহ যাপন করতে করতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রেমের কারণে শীর্ণ-জীর্ণ হয়ে পৃথিবী ত্যাগ করলেন বর্ণাঢ্য জমিদার কন্যা। পরবর্তীতে ১৯৩০ সালে লাহোরের ইউনিক পাবলিকেশন্স থেকে আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘যখন পুলিশ ছিলাম’ প্রকাশ করেন ধীরাজ ভট্টাচার্য। এই বইয়ে তিনি নিজেও লিখেছেন মাথিন প্রসঙ্গে। এই গ্রন্থে মূলতঃ ধীরাজ-মাথিনের ঐতিহাসিক প্রেমের কাহিনী ফুটে উঠেছে। সেই থেকে ধীরে ধীরে এই টেকনাফের কূপটি মানুষের নজরে আসতে শুরু করে। টেকনাফ মাথিন কূপের উৎস সন্ধানকারী আবদুল কুদ্দুস রানা বলছেন, ‘ঘটনাটি সত্য প্রেমের বেদনার্ত অধ্যায়। এই অধ্যায় তুলে ধরতে ১৯৮৪ সালে একটি সাইন বোর্ড টাঙিয়ে মাথিনের কূপটি ধরে রাখার চেষ্টা করেছি।’ কূপটি সংরক্ষণের ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, ‘আমি তখন স্কুল ছাত্র। কলকাতা থেকে কিছু সাংবাদিক টেকনাফে আসছিল। তখন তারা সঙ্গে করে কিছু বই নিয়ে আসছিল। ওই বইটির নাম ছিল ‘‘যখন পুলিশ ছিলাম’’। এই বইয়ের কোনও কভার ছিল না। বইটির ভেতরে তিন-চার পৃষ্ঠায় ধীরাজের লেখা একটি চিঠি ছিল। ঐতিহাসিক মাথিনের কূপের এই কাহিনীটি জানার পরে আমি তখন বাঁশের বেড়া দিয়ে মোড়ানো কূপটিতে ১৭৫ টাকা খরচ করে একটি টিনের সাইন বোর্ড লাগিয়ে দিয়েছিলাম। সেই লাগানো থেকে আজকের মাথিনের কূপ সংরক্ষিত হয়ে উঠেছে। এখন প্রতি বছর ৬ থেকে ৭ লাখ পর্যটক মাথিনের কূপ দেখতে আসেন। টেকনাফ মানে মাথিনের কূপ, মাথিনের কূপ মানে টেকনাফ।’ ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিমান কিংবা বাসে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে এসি বাসের জন্য যোগাযোগ: গ্রীন লাইন (ফোন: ৯৩৩৯৬২৩, ৯৩৪২৫৮০); সোহাগ পরিবহন (৯৩৩১৬০০, ৭১০০৪২২); সিল্ক লাইন (৭১০২৪৬১, ৮১০৩৮২)। ভাড়া ৮৫০ থেকে ১২০০ টাকা। নন-এসি বাসের জন্য যোগাযোগ: এস. আলম (৯৩৩১৮৬৪, ৮৩১৫০৮৭)। টেকনাফ শহরে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মোটলে ভাড়া ৫০০ থেকে ১২৫০ টাকা। এছাড়াও টেকনাফ শহরে সাধারণ মানে হোটেলে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে থাকা যায়।
Tuesday, 15 September 2020
Sunday, 30 August 2020
আমাদের টেকনাফ উপজেলা
আমাদের টেকনাফ উপজেলা
উপজেলার নাম - টেকনাফ
আয়তন - ৩৮৮.৬৮ বর্গ কিলোমিটার
পৌরসভা - ০১টি
ইউনিয়ন - ০৬টি
মৌজা - ১২টি (রিজার্ভঃ ০২টিসহ)
গ্রাম - ১৮৪টি
জনসংখ্যা - ২,৬৩,৩৮৯জন(পুরুষ-১,৩২,৮৫৭জন; মহিলা-১,৩০,৫৩২জন)
শিক্ষারহার - ১৯.৭২%
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
(ক) কলেজ - ০১টি
(খ) উচ্চ বিদ্যালয় (বালক) - ১১টি
(গ) উচ্চ বিদ্যালয় (বালিকা) - ০২টি
(ঘ) নিম্ন মাধ্যমিক - ০৩টি
(ঙ) প্রাথমিক বিদ্যালয় - সরকারীঃ ৩৪টি, রেজিষ্টার্ডঃ ২৩টি, আনরেজিষ্টার্ডঃ ০৮
(চ) মাদ্রাসা - ১১টি
সড়ক ও জনপথ (ক) মোট রাস্তা - ৬৫কিঃমিঃ
অন্যান্য রাস্তা(এলজিইডি) (খ) পাকা রাস্তা - ৪৭.১২কিঃমিঃ
(গ) কাচা রাস্তা - ৩৫৮.২৬কিঃমি
(ঘ) আধাপাকা - ৭৪.৩৯কিঃমিঃ
(ঙ) নির্মানাধীন - ১০কিঃমিঃ
নদীপথ - ০১টি (টেকনাফ-সেন্টমার্টিন)
স্থল বন্দর - ০১টি
হাটাবাজার - ১৩টি
সাইক্লোন শেল্টার - ৫১টি
মৎস্য বিভাগ (ক) শুটকীকরণ কারখানা - ৬টি
(খ) মৎস্য খামার (সরকারী) - ০১টি(সরকারী)
(গ) মৎস্য খামার (বেসরকারী) - ৪২৬টি (বেসরকারী)
বরফ কল - ০৫টি
চিংড়ী অবতরণ কেন্দ্র সার্ভিস সেন্টার - ০১টি (চিংড়ী ডিপোঃ ১৮৮টি)
প্রদর্শনী চিংড়ী খামার ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র -০১টি (সরকারী)
খাদ্য গুদাম - ০১টি
ভোটার সংখ্যাঃ ১,১৬,৮২১জন (ক) পুরুষ - ৫৬,১৬৩জন
(খ) মহিলা - ৬০,১০৮জন
পৌরসভার ভোটার সংখ্যাঃ১১১১২জন (ক) পুরুষ - ৫৮৪১জন
(খ) মহিলা - ৫২৭১জন
মোট ব্যাংক (ক) সরকারী - ০৪টি
(খ) বেসরকারী - ০২টি (ইসলামী ব্যাংক লিঃ, এবি ব্যাংক লিঃ)
সার বিতরণ কেন্দ্র - ০৮টি
প্রধান ফসল - ধান
প্রধান ব্যবসা - লবন
সমবায় (ক) আশ্রয়ন প্রকল্প - ০৭টি
(খ) নির্মিত ব্যরাক - ৩৭টি
(গ) পুর্ণবাসিত পরিবার সংখ্যা - ৩৭০টি
(খ) আশ্রয়ন প্রকল্প ফেইজ-২ - ০২টি
(ক) নির্মিত ব্যরাক - ০২টি
(খ) পুর্ণবাসিত পরিবার সংখ্যা - ২০টি
টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ
মেরিন ড্রাইভ সড়ক: কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক, যা বঙ্গোপসাগর এর পাশ দিয়ে কক্সবাজারের কলাতলী সৈকত থেকে টেকনাফ...

-
Teknaf Blog BD মাথিনের কূপ বাংলাদেশের টেকনাফ শহরে অবস্থিত টেকনাফ পৌরসভার নিকটস্থ থানা চত্ত্বরে এর অবস্থান। আঠারো শতকের শেষদিকে টেকনাফে স...